বর্তমানে কনটেন্ট নির্মাতাদের মাঝে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি একটি বিপ্লব এনে দিয়েছে। অনেকেই AI ব্যবহার করে সহজে ভিডিও তৈরি করছেন—কেউ ChatGPT দিয়ে স্ক্রিপ্ট লেখাচ্ছেন, কেউ D-ID বা Pictory দিয়ে ভিডিও বানাচ্ছেন, আবার কেউ AI ভয়েস দিয়ে পুরো ভিডিওই তৈরি করে ফেলছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই ধরনের AI দিয়ে বানানো ভিডিও দিয়ে কি সত্যিই YouTube বা Facebook থেকে আয় করা যায়? মনিটাইজেশন হয়?
এই আর্টিকেলে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করবো।
AI দিয়ে ভিডিও তৈরি – বিষয়টি কী?
AI এখন এমন এক প্রযুক্তি যা আপনার লেখা স্ক্রিপ্টকে ভিডিওতে রূপ দিতে পারে, এমনকি ভয়েসও দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:
- ChatGPT দিয়ে স্ক্রিপ্ট লেখা
- Pictory, InVideo, Synthesia দিয়ে স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী ভিডিও বানানো
- ElevenLabs বা LOVO.ai দিয়ে AI ভয়েস জেনারেট করা
- Canva বা Runway দিয়ে ভিজ্যুয়াল তৈরি করা
এই পুরো প্রক্রিয়াটি অনেকটাই স্বয়ংক্রিয়, যার ফলে একজন ব্যক্তি কেবল আইডিয়া দিয়েই একটি পূর্ণ ভিডিও তৈরি করে ফেলতে পারেন।
YouTube ও Facebook এর মনিটাইজেশন নীতিমালা
YouTube, Facebook (Reels বা Watch), এবং TikTok-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো মনিটাইজেশনের জন্য কিছু স্পষ্ট নিয়ম নির্ধারণ করেছে। তারা চায় original, value-added, and engaging content।
YouTube এর বক্তব্য অনুযায়ী:
“AI-generated content is allowed, but to be eligible for monetization, your content must demonstrate creativity, commentary, or educational value.”
অর্থাৎ, AI ব্যবহার করা যাবে, তবে তাতে ব্যক্তিগত অবদান, মৌলিক ব্যাখ্যা, এবং সৃজনশীলতা থাকতে হবে। নাহলে সেটি “reused content” হিসেবে বাতিল হতে পারে।
AI ভিডিও কি মনিটাইজ হয়? – হ্যাঁ এবং না
এই প্রশ্নের উত্তর “হ্যাঁ” এবং “না” দুইটাই। নিচে দুইটি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হলো:
✅ মনিটাইজ হবে যদি:
- আপনার কণ্ঠ, ব্যাখ্যা বা ব্যক্তিগত টাচ থাকে:
AI দিয়ে ভিডিও বানিয়ে তাতে আপনি ভয়েসওভার করেন, নিজের মতামত দেন, বা ব্যাখ্যা করেন। - ভিডিওটি Transformative হয়:
অর্থাৎ, ভিডিওটি শুধু AI generated না হয়ে এতে এমন কিছু থাকে যা দর্শককে নতুন কিছু শেখায় বা ভাবায়। - ভিডিও ইনফরমেটিভ, এডুকেশনাল বা এন্টারটেইনিং হয়:
AI ব্যবহার করে হলেও যদি ভিডিও দর্শকের জন্য মূল্যবান হয়, তাহলে মনিটাইজেশন সম্ভব। - AI শুধুমাত্র টুল হিসেবে ব্যবহার হয়:
আপনি ভিডিওর আইডিয়া, স্ক্রিপ্ট ও ভয়েস নিজের করেন, আর AI শুধু background visual বানায়।
❌ মনিটাইজ হবে না যদি:
- ভিডিও পুরোপুরি AI দিয়ে বানানো হয়:
স্ক্রিপ্ট, ভয়েস, ভিডিও সব AI—তাতে আপনার কোনো অবদান নেই, এমন কনটেন্ট YouTube ‘Reused’ বা ‘Low-value content’ হিসেবে রিজেক্ট করতে পারে। - অন্যের ভিডিও বা টেক্সট কপি করে AI দিয়ে নতুন ভিডিও বানানো হয়:
কেবল ChatGPT দিয়ে গুগল থেকে নেয়া তথ্য একত্র করে বানানো ভিডিও মনিটাইজ নাও হতে পারে। - ভিডিওতে কোনো personalization নেই:
কণ্ঠ, ব্যাখ্যা, মুখ, নিজস্ব মতামত না থাকলে প্ল্যাটফর্মগুলো সেটাকে স্প্যাম কনটেন্ট বলে ধরে।
মনিটাইজেশনের জন্য AI Video কেমন হওয়া উচিত?
সঠিকভাবে AI দিয়ে ভিডিও বানাতে হলে নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে:
🔹 নিজের লেখা স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করুন
🔹 AI ভিডিওতে নিজের ভয়েস বা ব্যাখ্যা যুক্ত করুন
🔹 ভিডিওতে কপিরাইট-মুক্ত ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করুন
🔹 AI কনটেন্টকে সাজিয়ে মানুষের মতো উপস্থাপন করুন
🔹 ভিডিও ইনফো, এডুকেশন, এন্টারটেইনমেন্ট – অন্তত একটিতে সমৃদ্ধ রাখুন
🔹 Clickbait না করে সঠিক টাইটেল ও থাম্বনেইল দিন
উদাহরণ: দুটি কনটেন্টের তুলনা
ভিডিও টাইপ | মনিটাইজেশন | ব্যাখ্যা |
---|---|---|
ChatGPT দিয়ে লেখা স্ক্রিপ্ট + আপনার ভয়েসওভার + Canva visual | ✅ হ্যাঁ | Transformative এবং ইনফরমেটিভ |
Pictory দিয়ে তৈরি + AI ভয়েস + কোনো ব্যাখ্যা নেই | ❌ না | Reused বা Low-quality ধরে নেওয়া হয় |
D-ID দিয়ে মুখ বানিয়ে ভিডিও + আপনিই স্ক্রিপ্ট লিখে পড়েছেন | ✅ হ্যাঁ | Value-added কনটেন্ট |
শেষ কথা:
AI হচ্ছে কেবল একটি শক্তিশালী টুল। এটি কনটেন্ট তৈরি সহজ করে তোলে, কিন্তু সফল মনিটাইজেশনের জন্য দরকার মৌলিক চিন্তা, ব্যাখ্যা, এবং মানুষের মতো উপস্থাপন।
তাই, AI দিয়ে ভিডিও বানান—কিন্তু তাতে নিজের “value” যোগ করুন। তাহলে মনিটাইজেশনও হবে, আর দর্শকরাও ভিডিওতে যুক্ত থাকবে।